গাউসুল আজম মাইজভান্ডারীর সংক্ষিপ্ত জীবনী
গাউছুল আযম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ
মাইজভান্ডারী (ক:)এর সংক্ষীপ্ত জীবনী
==============================
===============================
আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (জন্ম: ১৮২৬-
ওফাত: ১৯০৬) হলেন মাইজভান্ডারী
তরীকার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন একজন
সুফি সাধক বা পীর। তিনি আহমদ উল্লাহ
মাইজভান্ডারী নামেই বহুল পরিচিত। তাঁর
অনুসারীগণ শুরু হতে যে সকল প্রচার
প্রকাশনা বাংলা, আরবি, উর্দু এবং
ইংরেজি সহ বিভিন্ন ভাষায় ছাপিয়ে
আসছে, তাতে তাঁর নাম গাউছুল আজম হযরত
মৌলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ
মাইজভান্ডারী কেবলা ক্বাবা
কাদ্দাছাল্লাহু ছিরহুল আজিজ / (কঃ)
লিখতে দেখা যায়। এছাড়া তিনি গাউছুল
আজম, হযরত কেবলা, গাউছুল আজম
মাইজভান্ডারী, বড় মৌলানা, খাতেমুল
অলদ, শাঁই-এ-লিল্লাহ্ প্রভৃতি উপনামেও
বিশেষভাবে পরিচিত বলে একধিক ভাষায়
লিখিত বিভিন্ন লেখকের বই ও নিবন্ধে
উল্লেখ পাওয়া যায়।
জন্ম
আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী ১ম মাঘ,
১২৩৩ বাংলা সনে (১৫ই জানুয়ারী, ১৮২৬)
বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রাম শহর
হতে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে তৎকালীন
প্রত্যন্ত মাইজভান্ডার গ্রামে জন্ম গ্রহণ
করেন।[৭] তাঁর পিতার নাম সৈয়দ
মতিউল্লাহ মাইজভান্ডারী আর মাতার
নাম সৈয়দা খায়রুন্নেছা।[৮] তাঁর
পারিবারিক নাম ছিল সৈয়দ আহমদ
উল্লাহ।
বংশ পরিচয়
আহমদ উল্লাহর পুর্ব পুরুষ সৈয়দ হামিদ
উদ্দিন, গৌড় নগরে ইমাম এবং কাজীর পদে
নি্য়োজিত ছিলেন, গৌড় নগরে মহামারীর
কারণে ১৫৭৫ সনে চট্রগ্রামের পটিয়া
থানার কাঞ্চন নগরে বসতি স্হাপন করেন।
তথায় তাঁর নামানুসারে হামিদ গাঁও নামে
একটি গ্রাম আছে। তাঁর এক পু্ত্র সৈয়দ আব্দুল
কাদের ফটিকছড়ি থানার আজিমনগর
গ্রা্মে ইমামতি উপলক্ষে এসে বসতি স্হাপন
করেন। তাঁর পুত্র সৈয়দ আতাউল্লাহ তৎ পুত্র
সৈয়দ তৈয়বুল্লাহর মেজ় পুত্র সৈয়দ
মতিউল্লাহ মাইজভাণ্ডার গ্রামে এসে
বসতি স্হাপন করেন।
শিক্ষা জীবন
আহমদ উল্লাহ গ্রামের মক্তবের পড়ালেখা
শেষ করার পর ১২৬০ হিজরীতে উচ্চ
শিক্ষার্জনের উদ্দেশ্যে কলকাতা আলিয়া
মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তিনি ১২৬৮
হিজরীতে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে
পরীক্ষায় পাশ করেন। সেখানেই তিনি
তৎকালীন সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা
সমাপন করে ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানাদিতে
আমন্ত্রিত অতিথি বা বক্তা হিসাবে
যথেষ্ট সুনামের সাথে ধর্মীয় প্রচার-
প্রচারণার কাজে লিপ্ত ছিলেন।
কর্ম জীবন৷৷৷
তিনি শিক্ষা জীবন শেষে করে হিজরী
১২৬৯ সালে ব্রিটিশ শাসনাধীন অবিভক্ত
ভারতের যশোর অঞ্চলের বিচার বিভাগীয়
কাজী পদে যোগদান করেন এবং একই সঙ্গে
মুন্সেফী অধ্যায়ন শুরু করেন। পরবর্তিতে
১২৭০ হিজরীতে কাজী পদে ইস্তফা দিয়ে
তিনি কলিকাতায় মুন্সী বু আলী
মাদ্রাসায় প্রধান মোদাররেছ হিসাবে
যোগদান করেন। পরবর্তি সময়ে মুন্সেফী
পরীক্ষায় ও তিনি প্রথম স্থান অধিকার
করে ছিলেন।
আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী হাদিস,
তাফসির, ফিকহ, মন্তেক, হিকমত, বালাগত,
উছুল, আকায়েদ, ফিলছফা, ফারায়েজ সহ
যাবতীয় বিষয়ে অত্যন্ত অভিজ্ঞ ছিলেন।
আরবী, উর্দু, বাংলা ও ফারসি ভাষায়
তিনি বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তৎকালীন
সময়ে ওয়ায়েজ এবং বক্তা হিসাবে তার
নামডাক বিশেষ ভাবে ছডিয়ে পড়ে। অল্প
কিছু দিন পরই তিনি আধ্যাত্মিক জীবন
যাপনে আত্ম নিয়োগ করেন। তখন হতে
তিনি বাকি জীবন একজন সুফি সাধক
হিসাবে অতিবাহিত করেন।
বেলায়ত অর্জন
আহমদ উল্লাহ হযরত বড়পীর সৈয়দ আব্দুল
কাদের জিলানী (কঃ)-এর বংশধর ও উক্ত
তরিকার খেলাফত প্রাপ্ত সৈয়দ আবু
শাহামা মুহাম্মদ ছালেহ আল কাদেরী
লাহোরী (রঃ) নিকট বায়েত গ্রহনের
মাধ্যমে বেলায়ত অর্জন করেন এবং সৈয়দ
দেলওয়ার আলী পাকবাজ (রঃ) এর নিকট
হতে এত্তাহাদী কুতুবিয়তের ক্ষমতা অর্জন
করেন। তিনি দিনে দ্বীনি শিক্ষাদান ও
রাতে এবাদত ও রেয়াজতের মাধ্যমে সময়
কাটাতেন। এভাবে কঠোর সাধনার ফলে
তিনি আধ্যাত্মিক জগতের সর্বোচ্চ
বেলায়ত অর্জন করেছিলেন।
খলিফা
আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী জীবদ্দশায়
তাঁর সুফি তরীকার দীক্ষা সমাজে মানুষের
মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে বহু সুফি
প্রতিনিধি বা খলিফা নিয়োগ করেন বলে
উল্লেখ রয়েছে। তন্মধ্যে ২০৪ খলিফার নাম
ইতিপূর্বে বেশ কয়েকটি প্রিন্ট ও
ইলেক্ট্রনিক গণ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
সাংসারিক জীবন
আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী ১২৭৬
হিজরীতে ৩২ বছর বয়সে আজিম নগর
নিবাসী মুন্সী সৈয়দ আফাজ উদ্দিন
আহমদের কন্যা সৈয়দা আলফুন্নেছা বিবির
সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্ত
বিয়ের ছয় মাসের মাথায় তাঁর স্ত্রী মারা
যান। সেই বছরই তিনি পুনরায় সৈয়দা
লুৎফুন্নেছা বিবিকে বিয়ে করেন। ১২৭৮
হিজরী সালে তাঁর প্রথম মেয়ে সৈয়দা
বদিউন্নেছা বিবি জন্মগ্রহন করেন। কিন্তু
মেয়েটি চার বছর বয়সে মারা যায়। এরপর
তাঁর আরোও একটি ছেলে জন্মগ্রহন করে
অল্প দিনের মধ্যে মারা যান। অতঃপর ১২৮২
হিজরীতে দ্বিতীয় পুত্র সৈয়দ ফয়জুল হক
(রঃ) এবং ১২৮৯ হিজরী সালে দ্বিতীয়
কন্যা সৈয়দা আনোয়ারুন্নেছা জন্মগ্রহন
করেন। তাঁর দ্বিতীয় পুত্রও পিতার পুর্বে
ইন্তেকাল করেন।
ওফাত
গাউছুল আযম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ
মাইজভান্ডারী ২৩শে জানুয়ারি, ১৯০৬
সালে (১০ই মাঘ, ১৩১৩ বঙ্গাব্দ) আশি বছর
বয়সে ওফাত গ্রহন করেন। মাইজভান্ডারেই
তিনি সমাহিত হন এবং তাঁর কবরের উপর
বর্তমানে আধুনিক স্থাপত্য শৈলী খচিত
মাজার বিদ্যমান।
Comments
Post a Comment